ঢাকা ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে সহজ আমলে আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১
  • ১৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে আমার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা এক কথায় সর্বক্ষেত্রে আমি হব শ্রেষ্ঠ।

এছাড়া আমাদেরকে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। অথচ আজ আমরা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভুলে নানান মন্দ কাজে লিপ্ত রয়েছি। এমন কোন অন্যায় কাজ নেই যা আমার দ্বারা সংঘটিত না হচ্ছে।

বিশেষ করে আজ আমাদের মাঝে দয়ামায়া এতটাই কমে গেছে যে, আমার প্রতিবেশী কেউ না খেয়ে দিনাতিপাত করলেও তার প্রতি আমার হৃদয় থেকে সামান্যতম দয়া প্রদর্শনের বহি:প্রকাশ ঘটে না।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল সৃষ্টি-প্রাণীকূল আল্লাহর পরিবার-পরিজন। অতএব আল্লাহতায়ালার কাছে তার সৃষ্টজীবের মাঝে সে-ই প্রিয়ভাজন যে তার অধীনস্ত ও সৃষ্টজীবের সাথে দয়ার্দ্র আচরণ করে এবং তাদের প্রয়োজনের প্রতি যত্মবান থাকে।’ (মিশকাত)

অপর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, হজরত আলি (রা.) থেকে বর্ণিত- মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলমানের কাছে অপর মুসলমানের ৬টি অধিকার প্রাপ্য।

১. তার সাথে সাক্ষাত হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা।
২. সে হাঁচি দিলে ‘ইয়ারহাকুমুল্লাহ’ বলা।
৩. সে অসুস্থ হলে তার শুশ্রুষার জন্য যাওয়া।
৪. সে ডাকলে তার ডাকে সাড়া দেওয়া।
৫. সে মারা গেলে তার জানাযায় শামিল হওয়া।
৬. নিজের জন্য যা পছন্দ কর, অপরের জন্যও তা-ই পছন্দ করা। আর তার অবর্তমানে তার কল্যাণ কামনা করা।’ (সুনান দারমি, কিতাবুল ইস্তিযান)।

অপর এক বর্ণনায় হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একে অপরকে হিংসা করো না।

একে অন্যের ক্ষতি সাধনের জন্য প্রতিযোগিতা-মূলকভাবে (পণ্যের) অলীক মূল্য বৃদ্ধি করো না।
একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ রেখো না। একে অপরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না অর্থাৎ সম্পর্কহীনতার ব্যবহার করো না। একজনের দাম-দর করার সময়ে অপরজন দাম করবে না। আল্লাহতায়ালার বান্দা হিসেবে এবং পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে থাক।  মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অন্যায় করতে পারে না। তাকে হীন জ্ঞান করতে পারে না, তাকে লজ্জিত করতে পারে না।

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, তাকওয়া হা হুন্না অর্থাৎ ‘তাকওয়া এখানে’। এ বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন।

এরপর বলেন, নিজের কোন মুসলমান ভাইকে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখাটাই কোন মানুষের দুর্ভাগা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, সম্পদ, সম্মান ও সম্ভ্রম অন্য মুসলমানের জন্য হারাম এবং সম্মানের যোগ্য।’ (মুসলিম)

হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বর্ণিত হয়েছে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে দয়া প্রদর্শন করবে রহমান খোদা তার প্রতি দয়া করবেন। তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর তাহলে উর্ধ্বালোকবাসীরা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ, কিতাবুল আদব)

এখন আমাদেরকে ভাবতে হবে, অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শনের বিষয়ে ইসলাম কতই না জোর তাকিদ প্রদান করেছে অথচ এ বিষয়ে আমরা অনেক উদাসিন। আমরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। আমার প্রতিবেশী কষ্টে থাকলেও আমি তারা সাহায্যে এগিয়ে যাইনা।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা সহজেই আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

তাই আসুন, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সৃষ্টির সেবা করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে সহজ আমলে আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলে

আপডেট টাইম : ০৭:৩২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে আমার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা এক কথায় সর্বক্ষেত্রে আমি হব শ্রেষ্ঠ।

এছাড়া আমাদেরকে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। অথচ আজ আমরা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভুলে নানান মন্দ কাজে লিপ্ত রয়েছি। এমন কোন অন্যায় কাজ নেই যা আমার দ্বারা সংঘটিত না হচ্ছে।

বিশেষ করে আজ আমাদের মাঝে দয়ামায়া এতটাই কমে গেছে যে, আমার প্রতিবেশী কেউ না খেয়ে দিনাতিপাত করলেও তার প্রতি আমার হৃদয় থেকে সামান্যতম দয়া প্রদর্শনের বহি:প্রকাশ ঘটে না।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল সৃষ্টি-প্রাণীকূল আল্লাহর পরিবার-পরিজন। অতএব আল্লাহতায়ালার কাছে তার সৃষ্টজীবের মাঝে সে-ই প্রিয়ভাজন যে তার অধীনস্ত ও সৃষ্টজীবের সাথে দয়ার্দ্র আচরণ করে এবং তাদের প্রয়োজনের প্রতি যত্মবান থাকে।’ (মিশকাত)

অপর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, হজরত আলি (রা.) থেকে বর্ণিত- মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলমানের কাছে অপর মুসলমানের ৬টি অধিকার প্রাপ্য।

১. তার সাথে সাক্ষাত হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা।
২. সে হাঁচি দিলে ‘ইয়ারহাকুমুল্লাহ’ বলা।
৩. সে অসুস্থ হলে তার শুশ্রুষার জন্য যাওয়া।
৪. সে ডাকলে তার ডাকে সাড়া দেওয়া।
৫. সে মারা গেলে তার জানাযায় শামিল হওয়া।
৬. নিজের জন্য যা পছন্দ কর, অপরের জন্যও তা-ই পছন্দ করা। আর তার অবর্তমানে তার কল্যাণ কামনা করা।’ (সুনান দারমি, কিতাবুল ইস্তিযান)।

অপর এক বর্ণনায় হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একে অপরকে হিংসা করো না।

একে অন্যের ক্ষতি সাধনের জন্য প্রতিযোগিতা-মূলকভাবে (পণ্যের) অলীক মূল্য বৃদ্ধি করো না।
একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ রেখো না। একে অপরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না অর্থাৎ সম্পর্কহীনতার ব্যবহার করো না। একজনের দাম-দর করার সময়ে অপরজন দাম করবে না। আল্লাহতায়ালার বান্দা হিসেবে এবং পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে থাক।  মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অন্যায় করতে পারে না। তাকে হীন জ্ঞান করতে পারে না, তাকে লজ্জিত করতে পারে না।

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, তাকওয়া হা হুন্না অর্থাৎ ‘তাকওয়া এখানে’। এ বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন।

এরপর বলেন, নিজের কোন মুসলমান ভাইকে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখাটাই কোন মানুষের দুর্ভাগা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, সম্পদ, সম্মান ও সম্ভ্রম অন্য মুসলমানের জন্য হারাম এবং সম্মানের যোগ্য।’ (মুসলিম)

হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বর্ণিত হয়েছে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে দয়া প্রদর্শন করবে রহমান খোদা তার প্রতি দয়া করবেন। তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর তাহলে উর্ধ্বালোকবাসীরা তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ, কিতাবুল আদব)

এখন আমাদেরকে ভাবতে হবে, অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শনের বিষয়ে ইসলাম কতই না জোর তাকিদ প্রদান করেছে অথচ এ বিষয়ে আমরা অনেক উদাসিন। আমরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। আমার প্রতিবেশী কষ্টে থাকলেও আমি তারা সাহায্যে এগিয়ে যাইনা।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা সহজেই আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

তাই আসুন, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সৃষ্টির সেবা করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট